মোঃ পনির খন্দকার।
স্টাফঃ রিপোটার।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। নিহত গৃহবধূর তানজিলা বেগম (২৫) উপজেলার জামালপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মো. আমজাদ হোসেনের কণ্যা।
অভিযোগ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মোক্তারপুর ইউনিয়নাধীন পোটান গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে মোত্তাকিনের সাথে বিগত ৮ বছর ৪ মাস পূর্বে জামালপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মো. আমজাদ হোসেনের মোসা. তানজিলা আক্তারের বিবাহ হয়। তাদের সংসারে মিথিলা (৩) ও মোরসালিন (১) নামে দুইজন কণ্যা ও পুত্র সন্তান রয়েছে। তানজিলার সাথে স্বামী মোত্তাকিনের প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকত। মোত্তাকিন পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই তানজিলাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। যা একাধিক বার পারিবারিকভাবে মীমাংসা করা হয়েছে। এক পর্যায়ে তানজিলার পরিবার তাকে পিত্রালয়ে নিয়ে যাইতে চাইলেও সে স্বামী ও সন্তানদের রেখে কোন অবস্থায়ই যেতে রাজি হয়নি। তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে গৃহবধু তানজিলার সাথে তার স্বামী মোত্তাকিনের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঐ দিনই বিকালে স্থাণীয়রা তানজিলার বসত ঘরের সিলিং ফ্যানের আংটার সাথে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেতে পায়। মুহুর্তেই ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মোত্তাকিনের পরিবারের সদস্যরা দ্রæত গলার রশি কেটে লাশ নামিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অপপ্রচার করতে থাকেন। আর মোত্তাকিন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তানজিলার বাবাকে জানায় অসুস্থ দ্রæত এসে তাকে নিয়ে যান। অন্যদিকে এলাকাবাসী কালীগঞ্জ থানা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ইতিমধ্যে তানজিলার বাবা এসে মেয়েকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মোত্তাকিনের পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাস করলে তারা জানায় তানজিলা আত্মহত্যা করেছে। এ সময় মোত্তাকিনের পরিবার প্রভাবশালীদের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালায়। পরিকল্পিত হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য অপকৌশল করে তানজিলার বাবাকে থানায় অভিযোগ না করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। অবশেষে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এবং শুক্রবার সকালে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তানজিলার স্বামী মোত্তাকিন পলাতক রয়েছেন।
নিহত তানজিলার বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, চার বছর পূর্বে পার্শ্ববর্তী পোটান গ্রামের নজরুল ইসলামের পুত্র মোত্তাকিনের সাথে আমার মেয়ে তানজিলাকে বিয়ে দেই। তাদের সংসারে দুটি সন্তান হওয়ার পরও তানজিলার সাথে মোত্তাকিনের প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি করত এবং তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করত। মোত্তাকিন বৃহসপতিবার বিকেলে আমাকে মোবাইল ফোনে জানায় তানজিলা অসুস্থ দ্রæত এসে নিয়ে যান। আমি তাদের বাড়ীতে গিয়ে আমার মেয়েকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে বলে তানজিলা আত্মহত্যা করেছে। তার কিছুক্ষণ পর কালীগঞ্জ থানার পুলিশ আসলে মোত্তাকিনের পরিবার স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে আমাকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য চেষ্টা করে। এবং থানায় অভিযোগ না করার জন্য বিভিন্নভাবে আমাকে চাপ প্রয়োগ করে। তাদের কর্মকান্ডে আমার ধারণা তারা আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মোক্তারপুরের পোটান এলাকা থেকে তানজিলা নামের এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করি। শুক্রবার সকালে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করি। নিহত তানজিলার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে মোত্তাকিনের বিরুদ্ধে ৩০৬ ধারায় ৮(৫)২৫ নং মামলা গ্রহণ করি। মামলার তদন্ত চলছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রæত গ্রেপ্তার করা হবে।