১৩’শ হেক্টর ফসলি জমি, ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে
উজান থেকে আসা আকস্মিক বন্যায় শিবগঞ্জের পদ্মা, মহানন্দা ও পাগলা এই তিন নদীর পানি ব্যাপক হারে বৃৃদ্ধি পেয়েছে । ফলে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কালাই সহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১৩’শ হেক্টর ফসলি জমির ফসল তলিয়ে গেছে। সেই সাথে ৬টি ইউনিয়নের ৮ হাজার ৮’শ টি পরিবারের ৩৬ হাজার মানুষ ও ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানি বন্দি রয়েছে। ফলে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম ও ব্যাহত হয়েছে প্রার্থনা করার কাজ। তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে আছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, দুলর্ভপুর, ঘোড়াপাখিয়া, ছত্রাজিতপুর, মনাকষা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ৬টি ইউনিয়নের ১ হাজার ২৯২ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং প্রায় ৬ হাজার ৬২৫ জন কৃষকের মাসকালাই, রোপা আউশ, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, চিনা, আখসহ সবজি নষ্ট হতে বসেছে।
পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বলেন, গত কয়েকদিন থেকে পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চলের প্রায় ৯৮ ভাগ পরিমাণ জমির মাসকালাই ডুবে যাওয়ায় নষ্ট হতে বসেছে। এছাড়া অত্র ইউনিয়নের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানি বন্দি হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে প্রতি নিয়ত। এছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে ইউনিয়ন পরিষদের চারপাশে পানি চলে আসায় ইউপি ভবনও পানি বন্দি রয়েছে।
পাঁকা ইউনিয়নের কৃষক রফিক, রবিউল, বাইরুলসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে জমিতে মাষকলাই বীজ বুনেছিলাম। হঠাৎ করে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের সব জমির মাসকালাই ডুবে গেছে। এত আমাদের অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এছাড়া মনাকষা ইউনিয়নের সাহাপাড়া, তারাপুর,ঠুঠাপাড়া, হাঙ্গামী ও শিংনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করায় মাসকালাই চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মনাকষা ইউনিয়নের আমানুল্লাহ আমান, আবু হোসেন, কসর উদ্দিন, রাইসুদ্দিন, রানীনগরের শামতুল ইসলাম সহ অনেকেই জানান অনেক আশা করে মাস কলাই বপণ করেছিলাম। মাত্র চারদিনের বন্যায় সব পানির নীচে তলিয়ে গেছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুনাইন বিন জানান বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে পানি ঢুকেছে। ফলে উপজেলার ১২’শ ৯২ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষদিগ্রস্থ হয়েছে মাসকালাই চাষিরা। যার মধ্যে ১২’শ ৫০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৬২৫জন মাসকালাই চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এছাড়া ২০জন আঁখ চাষি, ৩২জন গীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষি, ২০ চিনা চাষি, ২০০জন সবজি চাষি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, শিবগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ৮ হাজার ৮’শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি দূর্লভপুর ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ এলাকায় ৭ হাজার ৪১৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ ও পানি বন্দি রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পাঁকা ইউনিয়নে ৭৫০টি, উজিরপুর ইউনিয়নে ১২৮টি, মনাকষা ইউনিয়নে ৩৪৫টি ও ঘোড়াপাকিয়া ইউনিয়নে ১৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ ও পানি বন্দি রয়েছে। আমার ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের খোঁজখবর নিচ্ছি এবং তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছি। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে