জাহাঙ্গীর আলম জামালপুরঃ
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় হাজরাবাড়ী জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন চাইতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন আশা মনি (২০) নামে এক নারী নার্স। এ ঘটনায় তিনি মেলান্দহ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে। এর আগে গতকাল সোমবার (২ জুন) দুপুরে ওই হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটলে সেদিন রাতেই মেলান্দহ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নার্স আশা মনি।
অভিযুক্তরা হলেন, হাজরাবাড়ী জেনারেল হাসপাতালের মালিক মাদারগঞ্জ উপজেলার উত্তর জোড়খালী এলাকার মৃত ফজলুল হকের ছেলে মো. সবুজ এবং মেলান্দহ উপজেলার গুজামানিকা এলাকার মৃত ধবু সরকারের ছেলে মো. রফিক।
ভুক্তভোগী আশা মনি মেলান্দহ পৌরসভার বাসুদেবপুর এলাকার আসর শেখের মেয়ে।
লিখিত অভিযোগ ও নার্স আশা মনির সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি প্রায় দুই বছর ধরে হাজরাবাড়ী জেনারেল হাসপাতালে নার্স হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, হাসপাতালের মালিক পক্ষ প্রথমদিকে সময়মতো বেতন দিলেও গত পাঁচ মাস ধরে কোনো বেতন পরিশোধ করেনি। একাধিকবার বেতন চাইলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করে আসছিল কর্তৃপক্ষ।
ভুক্তভোগী জানান, সোমবার (২ জুন) দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে তিনি হাজরাবাড়ী বাজার এলাকায় অবস্থিত হাসপাতাল কার্যালয়ে গিয়ে বকেয়া বেতনের কথা বলেন। এ সময় দুই মালিক মো. সবুজ ও মো. রফিক উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। হঠাৎ করেই তারা দু’জনে মিলে তাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
তিনি আরও জানান, শুধু শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতই নয়, তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। ঘটনার পর মানসিক ও শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় ওই রাতেই তিনি মেলান্দহ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে হাজরাবাড়ী জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের অধিকাংশ কক্ষ তালাবদ্ধ। চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ, মালিক পক্ষ ও অধিকাংশ কর্মচারী গা ঢাকা দিয়েছেন। অপারেশন থিয়েটার, রিসেপশন ও ব্লাড কালেকশন রুমসহ হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলো বন্ধ অবস্থায় দেখা যায়। রোগী ও স্বজনদের উপস্থিতিও ছিল না।
স্থানীয়রা জানান, এ হাসপাতালটিতে কর্মীদের সঙ্গে মালিক পক্ষের বেতন সংক্রান্ত বিরোধ নতুন নয়। তবে এবার বিষয়টি থানায় গড়ানোয় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আশা মনির অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য। তারা বলেন, “আমরাও দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছি না। টাকা চাইলে মালিকপক্ষ নানা অজুহাত দেয়। কেউ কিছু বললে দুর্ব্যবহার করে। চাকরি হারানোর ভয়েই মুখ খুলতে পারি না।”
ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত মো. রফিকের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অপর অভিযুক্ত মো. সবুজ বলেন, “আশা মনির এক মাসের বেতন বাকি রয়েছে, পাঁচ মাসের নয়। ওই দিনই তাকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। তবে হাসপাতালের ফার্মেসির কিছু দেনা পরিশোধ করতে গিয়ে টাকা হাতে রাখা যায়নি। আর মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি, শুধু কিছু কথা কাটাকাটি হয়েছে।”
এদিকে ভুক্তভোগী আশা মনি জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “আমি শুধু আমার পাওনা বেতন চেয়েছি। বিনিময়ে আমি এমন নির্যাতনের শিকার হবো, সেটা কল্পনাও করিনি।
এ বিষয়ে মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “আশা মনি নামে এক নার্স থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে এসেছে। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”