শিল্পী আক্তার রংপুর ব্যুরো
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উপলক্ষে একদিনে দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে পালিত হলো বৃহৎ পরিসরের পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচী। এই বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হলো সবুজায়ন ও প্লাস্টিক বর্জন প্রতিরোধের বার্তা।

মিশন গ্রিন বাংলাদেশ ও ওএবি ফাউন্ডেশন-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচীতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওএবি ফাউন্ডেশনের হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মোঃ আজমাইন ইসলাম।

মূল আয়োজনে যুক্ত ছিলেন রংপুরের বিভিন্ন পর্যায়ের পরিবেশপ্রেমী যুব সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবক দল।

রংপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিল ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্কফোর্স, রংপুর এবং যুবশক্তি সমাজ উন্নয়ন সংগঠন।

রংপুর শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস চত্বর, সড়কের পাশে ও জনসমাগম স্থানে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, স্বেচ্ছাসেবকসহ নানা পেশার মানুষ এই কর্মসূচীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

প্রতিটি স্থানে প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।

উদ্যোগকারীরা জানান, এই কার্যক্রম একদিনের জন্য নয়—সারা বছরজুড়ে পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতনতামূলক পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

স্লোগান ছিল "প্লাস্টিক নয়, প্রকৃতির জয়" এবং "আজ একটি গাছ, আগামীর আশ্বাস"।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুরসহ ৬৪টি জেলায় একযোগে একই দিনে প্রায় ১০০ গাছের চারা রোপণ করা হয়।

প্রতিটি জেলায় স্থানীয় সংগঠন ও স্কুল-কলেজভিত্তিক কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে শিশু ও তরুণদের পরিবেশ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়।

এই আয়োজনের মাধ্যমে আয়োজকরা পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরির আশা প্রকাশ করেন।

"পরিবেশ রক্ষায় এটি আমাদের প্রাথমিক পদক্ষেপ। আগামীতেও আমরা সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাবো।"

ওএবি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী মাসে ‘পরিবেশ কর্মী’ হিসেবে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হবে।

মিশন গ্রিন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ রক্ষা ও বৃক্ষরোপণে কাজ করে যাচ্ছে।

এই কর্মসূচীর মাধ্যমে যুব সমাজ ও শিশুদের পরিবেশ নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হয়েছে বলে আয়োজকরা মনে করেন।

ছাত্ররা হাতে প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার নিয়ে মিছিল করে—“Say No to Plastic”, “Green Bangladesh is Clean Bangladesh” ইত্যাদি শ্লোগানে শহরের বিভিন্ন সড়কে পদযাত্রা করে।

স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কর্মসূচী শান্তিপূর্ণভাবে ও সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের শেষভাগে অংশগ্রহণকারী সবাইকে একটি করে গাছের চারা উপহার দেওয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই কর্মসূচীর ব্যাপক প্রচার দেখা গেছে।

সচেতনতার ভিডিও, রিলস এবং পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে BeatPlasticPollution হ্যাশট্যাগে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্লাস্টিক দূষণের কারণে নদী, খাল, জলাশয় এবং জমিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে।

তরুণ সমাজকে নেতৃত্বে এনে পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যেই এই আয়োজন—এমনটিই জানান আয়োজকেরা।

এই কর্মসূচী পরিবেশ বিষয়ক নীতিনির্ধারণেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।

সবুজ বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।

পরিবেশ শুধু গাছ লাগালেই রক্ষা হবে না—প্লাস্টিক বর্জনের মতো সামগ্রিক রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয় বক্তৃতায়।

রংপুরের আয়োজনে প্রায় ৭০ জন এর মত স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।

এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্বেচ্ছাসেবীরা গাছ রোপণ ও পরিচর্যার কাজ করেছেন।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত থেকে প্রশংসা জানান এই উদ্যোগের।

সামগ্রিকভাবে এই কর্মসূচী দেশের পরিবেশ আন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনই আগামী প্রজন্মের টিকে থাকার নিশ্চয়তা—এই বার্তাই ছড়িয়ে দেওয়া হয় সর্বত্র।