আবুল কাশেম
সিনিয়র নির্বাহী সম্পাদক
চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার আনোয়ারা সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক নাজনীন নাহার মোটা অংকের ঘুষ নাদেওয়ায় মাতৃত্বকালীন ও চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে খোদ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছে, নাজনীন নাহারের বৈধ ছুটির আবেদন বারবার জমা দেওয়া সত্ত্বেও তা অনুমোদন করেননি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। ছুটি ও বেতন সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাওয়ায় শিক্ষিকার স্বামীকেও অশোভন আচরণের শিকার হতে হয়েছে।
২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর বিদ্যালয়টিতে যোগদান করা নাজনীন নাহার জানান, ২০২৪ সালের জুনে ভারতের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে জানতে পারেন তিনি যমজ সন্তান গর্ভে ধারণ করেছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় তাকে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হয়। ফলে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কয়েক দফায় ছুটির আবেদন করলেও তা অনুমোদন করা হয়নি। ছুটি সংক্রান্ত কোনো অফিস আদেশ না থাকায় তার কয়েক মাসের বেতন বিলও আটকে যায়।
নাজনীন নাহার বলেন, ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিই। আমার কাছে আবেদনপত্র, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনসহ সব কাগজের স্ক্যান কপি রয়েছে। আমার স্বামী ছুটির বিষয়ে জানতে অফিসে গেলে তাকে বলা হয়, বাচ্চা নিতে হবে কেন? এত ছুটি কেন লাগবে? চাকরি করবেন কি না বলেন।
পরে দাবি করা হয়, তার ছুটির আবেদনপত্র অফিস থেকে হারিয়ে গেছে।
শিক্ষিকার স্বামী চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রভাষক মো. রায়হান উদ্দীন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, '২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর আমার স্ত্রী উচ্চ রক্তচাপ ও প্রি-এক্লেমশিয়ার জটিলতায় যমজ সন্তানের জন্ম দেন। শিশুদের শারীরিক জটিলতার কারণে ২৮ দিন এনআইসিইউতে রাখতে হয় এবং এরপর স্ত্রীকেও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এতকিছুর পরও ছুটি বা বেতন-বিল কিছুই আমরা পাইনি।'
তিনি আরও জানান, 'ছুটির বিষয়ে কথা বললে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ভূঁইয়া তাকে লাঞ্ছিত করেন এবং বিসিএস ক্যাডার পরিচয় দিলেও তিনি অপমানজনক ভাষায় কথা বলেন। যদিও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল্লাহ কাউসার দুঃখ প্রকাশ করেন, তবে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।'
নাজনীন নাহারের অভিযোগ, সরকারি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিষয়টি তুলে ধরায় সেখান থেকেও আমাকে বের করে দেওয়া হয়। একজন মা হয়ে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে আমাকে এত কিছু সহ্য করতে হলো। স্বামীকেও অপমান সহ্য করতে হয়েছে। সরকারি চাকরিতে থেকেও ন্যায্য ছুটি ও বেতন পেতে বারবার আবেদন করতে হচ্ছে, এটা অত্যন্ত লাঞ্ছনাকর।
তিনি এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন। ফলে বর্তমানে কাজে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে কথা বলতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রহমান ভূঁইয়াকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অন্যসূত্রে জানা যায়, তিনি সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি। কী কারণে তিনি ছুটি পাননি তাও খতিয়ে দেখা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষিকার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ছুটি দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। পরবর্তীতে আর কোনো তথ্য পাইনি।
প্রকাশক ও সম্পাদক : জাহাঙ্গীর আলম বাবু
মোবাইল : ০১৭১১৩১১০৭৪-০১৫৫৬৮১৮৬৮০
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম শেওড়াপাড়া ইকবাল সরণি মিরপুর ঢাকা কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত